
বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর সমালোচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে, বিগত মেয়াদের প্রশাসকগণের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু থেকে এতদিনে যতদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি। কিন্তু বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যারের যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি কমতে শুরু করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি তখন নিয়োগ পাওয়ার একটি শর্ত বিশেষ করে চোখে পড়ে, সেটি হল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ধরনের লবিং ও যোগাযোগ অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। এমনকি নিয়োগ পাওয়ার পরেও যদি কখনো কোনো ধরনের নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন এর অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তাকে চাকরীচ্যুত করা হবে। ভেবেছিলাম এটি হয়তো লোক দেখানো কোন একটি কথার কথা লিখে রাখা হয়েছে, কেননা এর আগে অসংখ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা ও ভাইভা বোর্ড থেকে ঘুরে আসার পরে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিলো যে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শক্ত লবিং এবং আর্থিক লেনদেন ছাড়া নিয়োগ পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা বোর্ড অতিক্রম করে একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পরে আমার ঐ ভুল ধারণাটি বদলে যায়। বেরোবি, রংপুর -কে আধুনিক ও উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এগিয়ে নিতে অসংখ্য উদ্যোগের মধ্যে অপর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তাদের জন্য ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং এবং কর্মচারীদের জন্য ইন্ডাকশন ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করা। উল্লেখ্য যে, উক্ত ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং শিক্ষক, কর্মকর্তাদের জন্য যথাক্রমে ছয় মাস ও চার মাস এবং কর্মচারীদের জন্য ইন্ডাকশন ট্রেইনিং দুই মাস ব্যাপী। দেশী-বিদেশী অসংখ্য রিসোর্স পারসনদের সমন্বয় ঘটানো হয় এই ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং-এ। ট্রেইনিং এর মাধ্যমে যোগদানকৃত সকলে তার কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সার্বিক ধারণা লাভ করার পরে কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত দায়িত্ব পালন শুরু করার কারণে তারা হয়ে ওঠে আরো বেশি দক্ষ ও কর্মক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে অসংখ্য পদক্ষেপ যেমন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নাম পরিবর্তন করা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে এই বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে ইলেকট্রিক অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এন্ড রোবটিক্স সেন্টার নামে দু’টি আধুনিক সেন্টার, আধুনিক মানের কমিউনিকেশন ল্যাব স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরঞ্জাম কেনার কাজ অনেকখানি এগিয়ে গেছে, বিভাগের শিক্ষক সংকট দূরীকরণের লক্ষ্যে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে একাধিক সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, সরকারের এই ব্র্যান্ডিং কে এগিয়ে নিতে বেরোবি, রংপুর -কে একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত করতে নেয়া হয়েছে অসংখ্য পদক্ষেপ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে ওয়াই-ফাই- এর আওতায় নিয়ে আসা, ই-ফাইলিং, ভেহিকেল ট্রাকিং, নিজস্ব ডাটা সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি। ক্যাম্পাসের সার্বিক অবকাঠামো সংস্কারের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি আধুনিক মানের একটি প্রধান ফটক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ, বিভিন্ন সংযোগ সড়কের সংস্কার, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নতুন নতুন যানবাহন ক্রয়, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ, আধুনিক মানের গ্যারেজ স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ, আনসার ক্যাম্প স্থাপন ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষা-দীক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে এমন অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এমন দক্ষ একজন প্রশাসকের অভাবে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি সেভাবে এগিয়ে যেতে না পারলেও বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেরোবি, রংপুর-এর ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলের বিশ্বাস বর্তমান প্রশাসকের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ ও দূরদর্শী চিন্তা ভাবনার ফসল হিসেবে অদূর ভবিষ্যতে প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রাখবে।
মোঃ মনিরুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।