জাতীয়সারা দেশ

পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরালো,ওসি মনির

স্টাফ রি‌পোর্টার: ম‌হিদুল ইসলাম র‌ফিক

শেয়ার করুনঃ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা যখন সিনহা হত্যা মামলায় উত্তাল ও সমালোচনার মুখে পুলিশ বাহিনী, ঠিক তখন সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পুলিশ বাহিনী ভাসছে প্রশংসায়। এমনটা সম্ভব হয়েছে মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামানের কর্মদক্ষতায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মহামারি করোনায় দেশে লকডাউনের সময় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার দায়িত্ব নেন মনিরুজ্জামান। যোগদানের পর থেকে করোনা পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা প্রদান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও মাদক উদ্ধার অভিযানে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে জয় করে নেন মহিপুর এলাকার সাধারণ জনগণের হৃদয়।একের পর এক সাফল্য ও অপরাধে শাস্তির জন্য জিরোটলারেন্স ভূমিকা মহিপুরবাসীর মনে আস্থার প্রতীক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ওসি মনিরুজ্জামানকে তাড়ানোর চক্রান্ত শুরু করেন। মূলতঃ জমি দখল, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলকাজে হাত দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় মহিপুরে।

জানা গেছে, কুয়াকাটার পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লার প্রভাব খাটিয়ে ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা তাদের ভাই মোশারফ মোল্লা ও আবুল হোসেন মোল্লা একের পর এক সরকারি জমি, নৃগোষ্ঠি রাখাইন সম্প্রদায়ের জমি দখল, চায়না প্রজেক্টে বালি ভরাট, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারী কাজ, অবৈধ বালু উত্তোলন, সনদ ছাড়া বালু মহল ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ। এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য মোশারফ মোল্লা ও আবুল হোসেন মোল্লা ছিলেন বেপরোয়া।
জানা গেছে, গত জুলাই মাসে মহিপুর প্রেসক্লাব সভাপতি মনিরুল ইসলামের নিকট বালু ভরাট করতে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও চাঁদার টাকা না পেয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মহিপুর থানার ওসির একান্ত প্রচেষ্টা ও সাহসিকতায় মোশরেফ মোল্লাকে মহিপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করে। এঘটনায় আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর হলে মোশারেফ নিজেকে পরিবর্তন না করে আবারও দলবল নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
জানা গেছে, আবুল হোসেন মোল্লা ওরফে হোসেন মোল্লা পেশায় তাহেরপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জমিজমার সালিশী, ভূমি দখল, ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাখাইন অংসাচিং অভিযোগ করেন, আমাদের রেকর্ডিয় সম্পত্তি হতে ৪ একর জমি ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে নামজারি করেন আবুল হোসেন মোল্লা ওরফে হোসেন মোল্লা, আবুল হোসেন, নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম। এরা সকলে রাখাইন সম্প্রদায়কে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করে সম্পত্তি দখল করে নেয়। এই ভুমিদস্যূ হোসেন মোল্লা ও তার দোসরদের প্রভাবের কারনে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।
জানা গেছে, মহিপুরের পূর্ব মধ্য আলীপুর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ৭৬০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়। ৯ আগস্ট হোসেন মোল্লা অবৈধভাবে স্কেভেটর দিয়ে বিএসসিসিআই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত প্রভাব খাটিয়ে ওয়াপদার জমি কেটে রাখাইনদের ওই জমি ভরাট করতে গিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলসের অপটিক্যাল ফাইবারের কিছু অংশ কেটে রাষ্ট্রের বিপুল বাণিজ্যিক ক্ষতিসাধন করে। সাবমেরিন ক্যাবল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মোল্লাদের প্রভাবে ও পেশিশক্তির ভয়ে মামলা দিতে গড়িমসি করলেও দ্রুত সময় মহিপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জের তৎপরতায় হোসেন মোল্লা ও আবুল হোসেনকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় বিএসসিসিআই কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ড করায় মামলা করে।

মহিপুর এলাকায় আতঙ্কের আরেক নাম মোশারফ মোল্লা ও আবুল হোসেন মোল্লা। তাদেরকে মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামন আটক করেছে। ওসি সাহেব সৎ মানুষ। তাঁর প্রচেষ্টায় আজ আমাদের এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। তাঁর সফল অভিযানের ফলে এলাকায় মাদক ও চোরাকারবারির মাছের ব্যবসা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে পুলিশের তৎপরতা জনগণকে পুলিশের প্রতি আস্থা ও ভরসা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে।

মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামন একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, মহামারি করোনায় দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও অপরাধের সংখ্যা কমছে না। মহিপুর এলাকা এক সময় সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে মহিপুর সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছি। আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। কেউ অপরাধে জড়িত হলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। এমনকি আমি যদি অপরাধে জড়িত হই তাহলে আমাকেও আইন ছাড় দিবে না। আমি এটাই বিশ্বাস করি।


শেয়ার করুনঃ
Show More

সম্পর্কিত খবর

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button