সব

এক মিনিট ৬০ সেকেন্ড কেন হয়?

শেয়ার করুনঃ

৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট, আবার ৬০ মিনিটে ১ ঘণ্টা। এগুলো আমরা একদম ছোট্টবেলা থেকে শিখে আসছি। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে, কেন এক মিনিটকে ভাগ করে ৬০ সেকেন্ড ধরা হয়েছে? বা কেনই বা ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট হয়? কেন ৬০ মিনিটকে ১ ঘন্টা ধরা হয়? ৬০ মিনিটই কেনো? ১০০ মিনিটেও তো এক ঘণ্টা হতেই পারত, তাতে অসুবিধা কিসের ছিলো? কিংবা ১০০ সেকেন্ডে ১ মিনিট ও হতে পারতো? সেই হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা পদ্ধতিতেই এই হিসাব এখনও করা হয়। জানেন কি কেন এই ২৪ ও ৬০ এর পদ্ধতিই চালু হয়েছে? আসলে এই নিয়ম চালু হওয়ার পেছনে ইতিহাসবিদরা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

সংখ্যাগত কারণ
১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিটি এসেছে আমাদের হাতের যে ১০টি আঙ্গুল আছে তার কারণেই, কারণ এর ফলে কোনও কিছু গণনা করতে সুবিধা হয়।
আজ থেকে অন্তত প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, সুমেরীয় সভ্যতা তাদের জটিল গাণিতিক এবং জ্যামিতিক হিসাব করার জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করার পরিবর্তে ১২ এবং ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতো।

এই ১০ ভিত্তিক পদ্ধতির একটি সীমাবদ্ধতা হলো, এই সংখ্যাটিকে ২ ও ৫ ছাড়া অন্য কোনও সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। সেই তুলনায় কিন্তু দেখতে গেলে ১২ কে ২, ৩, ৪, ৬ দ্বারা এবং ৬০ কে ২ থেকে ৬ পর্যন্ত সব সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যায়। ফলে এসব পদ্ধতিতে ভগ্নাংশের কাজের হিসেব করা অনেকটাই সহজ ছিল।

এছাড়া সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের পরবর্তীতে ব্যাবলনীয়রা তাদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আর যে বাকি চারটি আঙ্গুল আছে তার তিনটি করে বিভাজন হিসাব করে এক হাতে মোট ১২ পর্যন্ত গণনা করত। এক হাতের ১২টি সংখ্যাকে যদি অন্য হাতের ৫টি আঙ্গুল দ্বারা গুণ করা হয় তাহলে দুই হাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ পাওয়া যায়। এটিও এই মিনিট-সেকেন্ড গণনা করার ক্ষেত্রে এই ৬০ সংখ্যাটি নির্বাচন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।

জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা

সুমেরীয় সভ্যতার পতনের পর খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্যাবলনীয়রা কোণ পরিমাপের জন্য ডিগ্রী আবিস্কার করে। সে সময় তাদের ধারণা ছিল পৃথিবী ৩৬০ দিনে একবার সূর্যকে আবর্তন করে। অর্থাৎ যদি প্রতিদিনের কৌণিক আবর্তনকে ১ ডিগ্রি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে পূর্ণ আবর্তনে ৩৬০ ডিগ্রি সম্পন্ন হয়।

ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন, এখান থেকেই বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রির ধারণাটি আসে। বৃত্তের এক ষষ্ঠাংশ, অর্থাৎ ৬০ ডিগ্রি প্রকৃত কোণ গঠন করে। অর্থাৎ ৬০ ডিগ্রী করে বৃত্তের অভ্যন্তরে ছয়টি ত্রিভুজ আঁকলে প্রতিটি ত্রিভুজ সমবাহু হয়। এ কারণে তখন থেকেই জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিদ্যায় ৬০ সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

৩৩৫ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বিশাল এলাকা বিজয়ের ফলে ব্যাবিলনের জ্যোতির্বিদ্যা গ্রীসে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলিম বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদরাও রোম এবং ভারত থেকে ১২ এবং ৬০ ভিত্তিক সময় পরিমাপের পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এভাবে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী এই পদ্ধতি বিস্তার লাভ করে।

আওয়ার বাংলাদেশ নিউস ২৪


শেয়ার করুনঃ
Show More

সম্পর্কিত খবর

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button